Thikana News
০৯ মে ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

বিএনপি ব্যর্থ হলে ফসল ঘরে তুলবে জামায়াত

বিএনপি ব্যর্থ হলে ফসল ঘরে তুলবে জামায়াত

প্রয়াত আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সফল আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে রাজপথে নামবে জামায়াতে ইসলামী। একই সঙ্গে তারা সারা দেশে সমাবেশের মাধ্যমে ভোটের প্রস্তুতিও শেষ করবে। আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে তারপর নির্বাচনে যাবে। দেশের বর্তমান অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা, নাগরিক অধিকার অনিশ্চিত থাকায় তাদের আন্দোলনের সঙ্গে দেশের মানুষ থাকবে বলে দলটির দাবি।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার পর গত ১০ জুন রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জামায়াত। এরপর গত ৭ জুলাই সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ানোর ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীর মিরপুরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে জামায়াত। দুটি কর্মসূচিতে কয়েক হাজার নেতাকর্মী যোগ দেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরেও জায়গা পায় জামায়াত। ১৫ জুলাই দুপুরে রাজধানীর গুলশানে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক হয় জামায়াতের। দীর্ঘ ১৫ বছর আত্মগোপনে থাকা দলটি আবারও প্রকাশ্যে আসায় ভোটের সমীকরণে অনেক হিসাব দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে একে বিকল্প শক্তিও মনে করছেন। কূটনৈতিক মিশনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি সমান গুরুত্ব পাচ্ছে জামায়াত। তবে হঠাৎ রাজপথে জামায়াতের এই ভূমিকার জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে দোষারোপ করছেন বামপন্থী রাজনীতিবিদরা। তারা বলছেন, দেশের বড় দুটি দল নিজেদের স্বার্থে জামায়াতকে ব্যবহার করছে, যা বাহাত্তরের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যেকোনো মুহূর্তে একটি পরিস্থিতি দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারে জামায়াত। এর জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে দায় নিতে হবে।
তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে ভিন্ন কথা। আন্দোলন সফলে এবার জামায়াতকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। একটি কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, এক দফার আন্দোলনে যে বিএনপি সফল হবে, তা অনেকেই ভরসা করতে পারছে না। তাই জামায়াতকে অধিক গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির সঙ্গে এবার ভোটের হিসাবেও জামায়াতের অবস্থান যুক্ত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবেও জামায়াতের কর্মকাণ্ড বিশেষ নজরে রয়েছে। বিএনপি যদি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়, তাহলে শেষবেলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলবে জামায়াত।
জামায়াতের নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, দীর্ঘ সময় রাজনীতিতে তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এতে দেশের সাধারণ নাগরিকের আস্থা বেড়েছে। তারা নিজস্ব জরিপেও পেয়েছে অতীতের চাইতে তাদের অনেক ভোট বেড়েছে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনে মানুষকে সঙ্গে পাবে বলেই মনে করছে। দলটির প্রচার বিভাগ বলছে, গত ১৫ বছরে তাদের ৯২ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাদের ২৪৬ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। ৯৬ হাজার নেতাকর্মীকে বিভিন্নভাবে আটক করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে পাঁচ হাজার নেতাকর্মীকে গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিদেশি কয়েকটি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে জামায়াতের গুম-খুনের বিষয়টি প্রকাশ পায়। আর জামায়াত তাদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি ডকুমেন্ট আকারে কূটনৈতিক দরবারেও পৌঁছায়। বিশেষ করে বই আকারে এর একটি তালিকা যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া হয়।
রাজনীতিতে চোখ রাখা ব্যক্তিরা বলছেন, জামায়াতকে যে বিদেশি শক্তিগুলো উৎসাহ দিচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়। যুক্তরাষ্ট্রকে সম্প্রতি জামায়াত বিশেষ ডকুমেন্টারি দিয়েছে, তারা সেটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির পাশাপাশি ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে জামায়াতের বৈঠকে প্রমাণিত হচ্ছে রাজনীতিতে জামায়াত এবার ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সুস্পষ্ট ঘোষণা, কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরই জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এ সরকারের আমলে দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে, অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। এর হাত থেকে জাতিকে উদ্ধার করা প্রয়োজন। এ জন্য রাজনীতিতে বিকল্প শক্তি হলো জামায়াত-এটা এখন সবাই মনে করছে।
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, আমরা এটা প্রমাণ করেছি, জামায়াতে ইসলামী কখনোই সহিংসতা করে না। জামায়াত কোনো সংঘাতেও বিশ্বাস করে না। জামায়াতে ইসলামী একটি সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল। আমরা দেশের সুসংগঠিত দল বলেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী অনুসন্ধানী দল আমাদের দাওয়াত দিয়েছে। আমাদের নিয়ে তাদের কিছু ভুল ধারণা ছিল, তারা এখন তাদের সেই কনসেপ্ট থেকে সরে এসেছে। আমরা মনে করছি, তাদের ভুল ধারণা কেটে গেছে। তিনি আরও বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ দ্বারা প্রমাণিত হয়ে গেছে, এ সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। কেয়ারটেকার বা নির্দলীয় সরকার যে নামেই হোক না কেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে।

কমেন্ট বক্স